আল্লাহ্র তৈরি বা সৃষ্ট বিশ্ব জগতে প্রতি মুহূর্তে নানা রকম জানা এবং অজানা পরিবর্তন ঘটে চলেছে। কিছু মানুষ বুছতে পারে কিন্তু অধিকাংশই থাকে দৃষ্টি সীমার বাইরে অথবা অনুধাবনের বাইরে। আবার যে টুকু সে দেখতে পায়, তার এই বোঝাঁর ভিতরও থাকে ব্যাপক ব্যাবধান। যেমনঃ একজন সাধারন মানুষ আকাশটাকে যে দৃষ্টি দিয়ে দেখে, একজন বিমান চালক এর আকাশ দেখা তার চাইতে অনেক আলাদা। আবার একজন বিমান চালক আকাশ টাকে যে দৃষ্টি দিয়ে দেখে, একজন নভোচারীর আকাশ দেখা তার চাইতে অনেক অনেক আলাদা।
এবার ফিরে আসি মাটির দিকে। একজন কৃষক তার জমির মাটিকে যে ভাবে জানে ও চিনে, একজন কৃষি বিজ্ঞানীর মাটি সম্পরকে দৃষ্টি ভঙ্গি একেবারেই আলাদা। একটি বাড়ি বানাবার জন্য একজন সাধারন মানুষের যে চিন্তা ভাবনার প্রেক্ষাপট, সেখানে একজন প্রকৌশলীর চিন্তা ভাবনা একেবারেই ভিন্ন। সুতারং দেখা যাচ্ছে যে একই জিনিসের ভিন্ন ভিন্ন অবস্থান ও অনুভবের কারণে বিভিন্ন ডাইমেনশন তৈরি হয়ে যায়।
যাইহোক, আবার ফিরে আসি “পরিবর্তন” এর বিষয়ে যা এই আলোচনার মুল বিষয়বস্তু।
২০২০ যখন শুরু হয়েছিল তখন আমরা এই পৃথিবীর মানুষেরা কি কল্পনা করতে পেরেছিলাম যে, ২-৩ মাসের মধ্যেই আমরা সহ পৃথিবীর জ্ঞ্যান বিজ্ঞ্যানে অগ্রগামী, অর্থনৈতিক ভাবে সমৃদ্ধশালী, সামরিক শক্তিতে প্রতাপশালী দেশ গুলি এমন ভাবে স্তব্ধ হয়ে পড়বে? অত্যাচারী ও অহংকারী নেতারা এমন ভাবে অসহায় হয়ে নিজ নিজ দেশের হাজার হাজার মানুষের মৃত্যু অবলোকন করবে একান্ত নিরুপায় হয়ে। তাও আবার কোন পরাশক্তির কাছে না, একটি ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র চোখে দেখা যায় না, এমন একটি ভাইরাস এর কাছে?? কতই না আমাদের শক্তি, কতই না আমাদের অহংকার, কতই না আমাদের লোভ লালসা। সব কিছু বাদ দিয়ে আমরা এখন নিজ গৃহে বন্দি এক অদৃশ্য করোনা ভাইরাস এর ভয়ে। বর্তমানে আমরা এতই ভীতিকর অবস্থার ভিতর দিয়ে দিনাতিপাত করছি যে, ২-৪ দিন পূর্বেও যারা সৃষ্টি কর্তাকে অবহেলার বিষয় মনে করতাম এখন সেই আমরাই তার কাছে পরিত্রানের জন্য আকুল হয়ে আবেদন জানাচ্ছি। কিন্তু সত্যি কি আমরা নিজেদের কে পরিবর্তন করে আল্লাহ্র মনোনীত দীন ইসলামের দিকে ফিরে আসতে চাই?
নাকিঃ-
“আর মানুষের মধ্যে এমন লোকো ও রয়েছে যারা বলে। ‘আমরা আল্লাহ্ ও শেষ দিবসে ঈমান এনেছি’ অথচ তারা মুমিন নয়।“ সুরা বাকারা -২ আয়াত – ৮
অথবাঃ-
“তাদের (আমাদের) অভ্যাস ফির’আউনী সম্প্রদায়ের ও তাদের পূর্ববর্তীদের অভ্যাসের ন্যায়, তারা আমার আয়াতগুলোতে মিথ্যারোপ করেছিল, ফলে আল্লাহ্ তাদের পাপের জন্য তাদেরকে পাকড়াও করেছিলেন। আর আল্লাহ্ শাস্থি দানে অত্যন্ত কঠোর।“ সুরা আলে ইমরান-৩ আয়াত-১১
নাকিঃ-
বলুন, ‘কে তোমাদেরকে নাজাত দেন স্থল্ভাগের ও সাগরের অন্ধকার থেকে? যখন তোমরা কাতরভাবে এবং গোপনে তাকে ডাক যে, আমাদেরকে এ থেকে রক্ষা করলে আমরা অবশ্যই কৃতজ্ঞদের অন্তর্ভুক্ত হব।‘ সুরা আল-আন’আম – ৬ আয়াত – ৬৩
অথবাঃ-
“মানুষকে যখন কোন দুঃখ- দৈন্য স্পর্শ করে তখন সে বসে, শুয়ে, দাড়িয়ে সরবাবস্থাই আমাকে ডাকে, অতপর আমি যখন তার দুঃখ-কষ্ট তার কাছ থেকে সরিয়ে নিয়ে যাই, তখন সে এমনি বেপরোয়া হয়ে চলতে শুরু করে, তাকে যে এক সময় দুঃখ-কষ্ট স্পর্শ করেছিল, তা দূর করার জন্যে মনে হয় আমাকে সে কখনও ডাকেইনি; এভাবেই যারা বার বার সীমালঙ্ঘন করে তাদের জন্য তাদের কাজকর্ম শোভনীয় করে দেয়া হয়েছে” সুরা ইউনুস – ১০ আয়াত – ১২
কাজেই আমাদের বর্তমানের দুঃখকষ্ট ও অনিশ্চয়তার ভিতরেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে, আমরা আসলেই পরিবর্তিত হয়ে সঠিক পথ অর্থাৎ দীন ইসলামের পথে ফিরে আসব, নাকি বিপদ দুরিভুত হয়ে গেলে আবারও গতানুগতিক জীবন প্রবাহে গাঁ ভাসিয়ে দেব। নিজেকে পরিবর্তন করতে চাইলে পরিবর্তনের বিষয়গুলিকে যথাযথ ভাবে মুল্ল্যায়ন করতে হবে।
যেমনঃ
১) এক আল্লাহ্ – জিনি জগত সমুহের একমাত্র মালিক, আখেরাত, বিচার দিবস, নাবি-রাসুল গন, কিতাব সমুহ, ফেরেশতা গন ও জীন জাতির বিষয়ে আমাদের ঈমান কতটা মজবুত।
২) নামাজের সাথে, কুরআন এর সাথে এবং সওম/রোজা এর সাথে আমাদের সংযোগ কতটা গভীর।
৩) মুহাম্মাদ (সঃআঃ) সুন্না অনুসারে আমরা কতটুকু নিজেদের জীবনকে ও আমাদের পারিবারিক জীবনকে পরিচালিত করতে পারছি।
৪) মুসলিম হিসাবে মানুষের সাথে আমাদের ব্যাবহার বা আচরন রুক্ষ না বিনয়ী।
৫) আমরা মিথ্যা কথা বলা পরিহার করতে পারছি কিনা।
৬) আমরা হালাল পথে আমাদের জিবিকা উপার্জন করতে কতটা সচেতন।
৭) আমরা ঘুস মুক্ত, সুদ মুক্ত উপার্জন দ্বারা আমাদের জীবনকে পরিচালনার জন্য কতটুকু সচেষ্ট।
৮) আমাদের বন্ধুত্ত দীনি ভাইবোন দের সাথে বেশী মজবুত নাকি অন্যদের সাথে। প্রতিবেশীদের সাথে ও অর্থনৈতিক দিক থেকে কাহিল আত্মীয় দের সাথে আমাদের সম্পর্ক কেমন।
৯) আমাদের উপার্জন থেকে আমরা ঠিক মত জাকাত, ফিতরা এবং দান-সদাকা করি কিনা।
১০) আল্লাহ্র অসীম দয়ায় প্রাপ্ত মূল্যবান সময় থেকে দীন ইসলাম প্রচার ও প্রশারের ক্ষেত্রে আমাদের প্রচেষ্টা কতটুকু??
বর্তমানে নিজেকে পরিবর্তনের দুটি সুযোগঃ
এক – করোনা নামক মহামারীর কারণে আমরা সকলেই কম-বেশি চিন্তিত, অবশ্যই এটি আল্লাহ্র নির্দেশেই এসেছে এবং সুনিদৃষ্ট কারন নিয়েই এসেছে। মুসলিমদের জন্য নির্ঘাত এটি একটি পরিক্ষা। বিচক্ষনতার সাথে, সবরের সাথে, নিয়ম শৃঙ্খলার সাথে উপযুক্ত ব্যাবস্থাপনায় এবং সর্বোপরি একমাত্র আল্লাহ্র উপর পরিপূর্ণ নির্ভরতায় আমরা এর অকল্ল্যান থেকে মুক্তি পেতে পারি। কারন, মহান আল্লাহ্ তার প্রেরিত প্রতিনিধি মানুষ কে খুবি ভালবাসেন। একমাত্র তিনিই মানুষদের যুগে যুগে বিপদ থেকে উদ্ধার করেছেন।
“আর আমি যখন রোগাক্রান্ত হই তখন তিনিই আমাকে রোগমুক্ত করেন” সুরা আশ শোয়ারা -২৯, আয়াত – ৮০
“যদি আল্লাহ্ তায়ালা তোমাকে কোন দুঃখকষ্ট দেন তাহলে তিনি ছাড়া অন্য কেউই নেই তা দুরিভুত করার, (আবার) তিনি যদি (মেহেরবানী করে) তোমার কোন কল্যাণ চান তাহলে সে কল্যাণ রদ করারও কেউ নেই; তিনি তার বান্দাদের যাকে চান তাকেই কল্যাণ পৌঁছান; তিনি বড়ই ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু। সুরা ইউনুস – ১০ আয়াত – ১০৭
দুই – মহিমান্বিত রমাদান আমাদের অতি নিকটে। ইনশা আল্লাহ্ আমরা রমজান মাসে পোউছাতে পারব এবং ইবাদতের মাদ্ধমে আল্লাহ্র রহমত, মাগফিরাত ও নাজাত এর করুনাধারায় মুত্তাকী হতে পারব। তাহলে আমাদের ভয় কেন? আমাদের দুক্ষ কেন? হতাশা কেন? আগামী দিনগুলো আমাদের জন্য সুবর্ণ সুযোগ। আসুন অবহেলা না করে এই মহা মূল্যবান সুযোগকে ও সময়কে আমার যথা যথ ভাবে কাজে লাগাই। যখন একজন আত্মসমর্পণকারী মুসলিম অনুধাবন করতে পারবেন যে, দুনিয়াতে তার বর্তমান সময়টি খুবই সংক্ষিপ্ত এবং আখেরাতের সময় অফুরন্ত তখন তিনি অবশ্যই আখেরাতের সাফল্যের জন্যই সর্বাধিক প্রচেষ্টা চালাবেন।
“হে মানুষ, তোমরা যারা ঈমান এনেছো, তোমাদের ওপর রোযা ফরয করা হয়েছে, যেমনি করে ফরয করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের ওপর, যেন তোমরা এর মাধ্যমে তকওয়া অর্জন করতে পার।“ সুরা বাকারা -২ আয়াত -১৮৩
“রামাদান মাস, এতে কুরআন নাযিল করা হয়েছে মানুষের হেদায়াতের জন্য এবং হিদায়েতের স্পষ্ট নিদর্শন ও সত্যা সত্যের পারথক্ককারী রূপে। কাজেই তোমাদের মদ্ধে যে এই মাস পাবে সে যেন এ মাসে সিয়াম পালন করে। তবে তোমাদের কেউ অসুস্থ থাকলে বা সফরে থাকলে অন্য দিন গুলিতে এ সংখা পুরন করবে। আল্লাহ্ তোমাদের জন্য সহজ চান এবং তোমাদের জন্য কষ্ট চান নে। আর যাতে তোমরা সংখা পূর্ণ কর এবং তিনি তোমাদেরকে যে হিদায়েত দিয়েছেন সে জন্য তোমরা আল্লাহ্র মহিমা ঘোষণা কর এবং যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর।“ সুরা বাকারা -২ আয়াত -১৮৫
দোয়া ঃ-
হে আল্লাহ্, হে রাহমানুর রাহিম,
# আপনি আমাদেরকে ক্ষমা করুন। আমাদের সকল অপরাধ ও অবহেলাকে মার্জনা করুন।
# অন্য জাতি বা সম্প্রদায় এর মত আমাদেরকে শাস্তি দেবেন না।
# আপনার প্রিয় হাবিব মুহাম্মাদ (সঃআঃ) এর উম্মত হিসাবে আমাদেরকে পরিপূর্ণ ভাবে ইসলাম এর পথে ফিরে আসার তৌফিক দান করুন।
# নামাজ ও কুরআন কে আমাদের ইহ জীবন এবং পরবর্তী জীবনের সাথী বানিয়ে দিন।
# বর্তমান মহামারীর পরিস্থিতি থেকে আমাদেরকে শিক্ষা গ্রহন ও ইসলাম এর পথে ফিরে আসার সুযোগ দান করুন।
# হে আল্লাহ্, এর সকল অকল্যাণ থেকে আমাদেরকে দয়া করে হেফাজত করন এবং এর ভিতরে যদি কোন কল্যাণ থাকে তবে সেটা আমাদের জন্য বরাদ্দ করুন।
# মুহাম্মাদ (সঃআঃ) সহ সকল নবী রাসুলদের নিকট আমাদের সালাম পৌঁছানর ব্যাবস্থা করুন।
# খাটি মুসলিম ও ঈমানের সাথে আমাদের মৃত্যু দান করুন।
# আমাদের কুরআন ক্লাসের ভাইবোন ও হজের সাথী ভাইবোন, তাদের মা-বাবা সহ পরিবার এর অন্ন্যান্ন সদস্যদের হেফাজত করুন।
# আপনি আমাদের একমাত্র মালিক, আমরা একমাত্র আপনার কাছেই আশ্রয় চাই। আমরা আপনার সাথে কোন কিছুকেই শরিক করি না।
কামরুজ্জামান
কুরআন ক্লাস ৭৩