সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলার যিনি রামাদানকে সকল মাসের মধ্যে শ্রেষ্ঠ বানিয়েছেন। যিনি রামাদানকে মুমিনদের জন্য সারা বছরের প্রস্তুতি, আমর বিল মারুফ ওয়া নাহি আনিল মুনকার (সৎকাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ) এর প্রশিক্ষন, সবর (ধৈর্য) বা জুহদ (সংযম) এর জন্য নিজেদেরকে তৈরী করে নেওয়ার, শক্তি অর্জন করার একটি অভাবনীয় সুযোগ দিয়েছেন। এই মাস মুসলিমদের শক্তি অর্জনের মাস। নিজেদের সুপার হিরোদের স্মরণ করার মাস।
আল্লাহ আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা বলেন:
ওহে যারা ইমান এনেছ, তোমরা আল্লাহ্কে ভয় কর যেভাবে ভয় করা উচিৎ এবং তোমরা মুসলিম না হয়ে মৃত্যুবরণ কর না। (সূরা আলি ইমরান, আয়াত ১০২)।
আর প্রতিটি মুসলিম নিজেকে সুপার হিরো হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করার কথা। আজ মুসলিমদের হিরো নামকরা কোনো অভিনেতা, বিশ্বসেরা কোনো ফুটবল প্লেয়ার, বিখ্যাত কোনো গায়ক, অথবা কোনো কার্টুন চরিত্র! সমাজের বাস্তব জীবনের সবচাইতে চরিত্রহীন সব ব্যক্তিত্ব কিংবা গল্প-কবিতার অবাস্তব চরিত্রকে নিজের হিরো বানিয়ে নিচ্ছে, অথচ মুসলিম ইতিহাসে সত্যিকারের হিরোদের তারা চেনেই না।
তারা চেনে না সত্য আদর্শের জন্য লড়াই করা মানুষগুলোকে – উমার ইবন খাত্তাব, খালিদ বিন ওয়ালিদ, আবদুল্লাহ ইবন জাহশ, আনাস বিন নযর (রদ্বিয়াল্লাহু আনহুম) কিংবা তারিক বিন যিয়াদ মুহাম্মাদ ইবন কাসিম, যিয়াদ ইবন আগলাব, সালাহ উদ্দিন আইয়ুবী, সাইফুদ্দিন কুতুজ। মুসলিমরা জানেই না — লড়াই, আবেগ আর সাহসিকতার গল্পগুলো খেলার মাঠ আর রূপালি পর্দার চাইতেও হাজারগুণে বেশি আছে ইসলামের পাতায় পাতায়।
এজন্য মুসলিম হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য কুরআন আল্লাহ দিয়েছেন।
“রমজান মাস, যাতে কোরআন কে নাযিল করেছি মানুষের দিশারী, সৎপথের স্পষ্ট নিদর্শন ও সত্যমিথ্যার পার্থক্যকারী হিসেবে”। (সূরা আল বাকারা – আয়াহ ১৮৫)।
এই কুরআনের প্রকৃত প্রয়োগের ফলে মাত্র কিছু বছরের মধ্যে মুসলিম উম্মাহ কিভাবে সামরিক-অর্থনৈতিক পরাশক্তিতে পরিণত হয়েছিল, জ্ঞান-বিজ্ঞানে উন্নতি করেছিল, ন্যায় বিচার দিয়ে পৃথিবীর অর্ধেকের বেশি অঞ্চল শাসন করেছিল।
“রমযান মাসই হলো সে মাস, যাতে নাযিল করা হয়েছে কোরআন, যা মানুষের জন্য হেদায়েত এবং সত্যপথ যাত্রীদের জন্য সুষ্পষ্ট পথ নির্দেশ আর ন্যায় ও অন্যায়ের মাঝে পার্থক্য বিধানকারী। কাজেই তোমাদের মধ্যে যে লোক এ মাসটি পাবে, সে এ মাসের রোযা রাখবে।” (সুরা বাকারা আয়াত ২:১৮৫)
হযরত মুহাম্মাদ (সা) প্রথম ওহী পেয়ে নবী হয়েছিলেন ৬১০ সালের রমজান মাসেই। এই ওহির মাধ্যমেই বিশ্ববাসীকে জানিয়ে দেয়া হয়েছে ইতিহাস ও তার শিক্ষা। যেখানে বলা হয়েছে
“পূর্বে যা ঘটে গেছে তার কিছু সংবাদ এভাবেই আমরা তোমার কাছে বর্ণনা করি। আর আমরা তোমাকে আমাদের পক্ষ থেকে উপদেশ দান করেছি। তা থেকে যে বিমুখ হবে, অবশ্যই সে কিয়ামতের দিন পাপের বোঝা বহন করবে।” (সূরা ত্বা-হা, আয়াত: ৯৯-১০০)
ইতিহাস শুধু জানার জন্যই নয় বরং এর থেকে আমাদের শিক্ষা নেওয়া আমাদের মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হওয়া উচিত।
রামাদান শুধু রোজায় ক্লান্ত ও অবসাদগ্রস্ত হয়ে যাওয়ার মাস নয়, শুধু বাহারি ইফতার ও উত্কৃষ্টমানের খাবারদাবারের আয়োজনের জন্য নয়। বরং রামাদানের ইতিহাস মুসলিমদের ত্যাগের ইতিহাস। আমাদের পূর্বসূরীরা এই রমাদান মাসেই কঠোর ঈমানের পরীক্ষা দিয়ে গেছেন যুদ্ধের ময়দানে।
মুসলিমদের জন্য রামাদান মাস হল বিজয়ের মাস, গৌরবের মাস, সাহসিকতার মাস। আল্লাহর জন্য জীবন বিলিয়ে দেওয়ার মাস। ইতিহাস, ঐতিয্য ও বরকতময় সময়ের সমন্নয় এই রমাদান মাস। মুসলিমদের এই রামাদান ইসলামের জন্য যেমন গুরুত্বপূর্ণ তেমনি বিশ্ব ইতিহাসের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। কারন রামাদান অনেকবার বিশ্ব ইতিহাসের গতিধারা বদলে দিয়েছিল। ইসলাম ও মুসলিমদের ত্যাগ ও ত্যাগের বিনিময়ে বিজয় ও সফলতার ইতিহাসসমৃদ্ধ অনেক গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা বুকে ধারণ করে আছে এ মাস।