বাংলায় ইসলামের আগমন

ঐতিহাসিকদের মতে হিজরী ১ম শতকেই আরব মুসলিম বণিকদের মাধ্যমেই এদেশে প্রথম ইসলামের আগমন ঘটে। বাণিজ্যের পাশাপাশি সমগ্র দক্ষিণ এশিয়ার বিস্তীর্ণ উপকূলবর্তী অঞ্চলগুলোতে তারা ইসলাম প্রচার করেছিলেন। যার মধ্যে বাংলাদেশও ছিল। চীনের ক্যান্টন সমুদ্রতীরে অবস্থিত সাহাবী আবু ওয়াক্কাস মালিক বিন ওহাইবের মসজিদ ও কবর সে সাক্ষ্যই দেয়। অষ্টম-নবম শতাব্দীতে সন্দীপ, রামুসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বণিক ও মুবাল্লিগরা ইসলাম প্রচার করেছিলেন বলে ঐতিহাসিক প্রমাণ পাওয়া যায়। তৎকালীন আরব লেখকদের বর্ণনায় সামরূপ (কামরূপ-আসাম) ও রাহমি রাজ্যের কথা এসেছে, যা ৮ম-১২শ শতাব্দীর পাল সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত ছিল। রাজশাহী পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার ও কুমিল্লার ময়নামতিতে প্রাথমিক আববাসীয় যুগের মুদ্রা পাওয়া গেছে।

সম্প্রতি লালমণিরহাটে (সদর উপজেলার পঞ্চগ্রাম ইউনিয়নের মজদের আড়া গ্রামে) ৬৯ হিজরীতে নির্মিত একটি প্রাচীন মসজিদের ধ্বংসাবশেষ পাওয়া গেছে। উপকূলীয় চট্টগ্রাম ( شاطئ الغنغ-গঙ্গা উপকূল) ও নোয়াখালীর বিভিন্ন স্থানের নাম ও ভাষায় আরবী অপভ্রংশের প্রচুর উপস্থিতি এসব নিদর্শনকে আরো সপ্রমাণিত করে। চট্টগ্রামে ঐ সময় একটি মুসলিম রাজ্যও স্থাপিত হয়েছিল বলে অনুমান করা হয়। সুতরাং ধারণা করা যায় যে, হিজরী প্রথম শতকেই বাংলায় ইসলামের আগমন ঘটেছিল। তবে ঐ সময় ইসলাম প্রচারের উদ্দেশ্যে এতদঞ্চলে যারা আগমন করেন তাদের পরিচয় সম্পর্কে ইতিহাস নীরব। পরবর্তীকালে আগতদের মাত্র কয়েকজনের নাম জানা যায় যারা মূলতঃ মধ্যএশিয়া ও পারস্য থেকে এ দেশে আগমন করেন।

শাহ মুহাম্মাদ সুলতান বলখী (১০৪৭খৃ.-বগুড়ার মহাস্থান), শাহ মুহাম্মাদ সুলতান রূমী (১০৫৩ খৃ-নেত্রকোনা), বাবা আদম শহীদ (১১১৯খৃ-মুন্সীগঞ্জ), শাহ মখদুম রুপোশ (১২৮৯খৃ.-রাজশাহী), শাহ নিয়ামত উল্লাহ বুতশিকন (১১২০ খৃ. ঢাকা), জালালুদ্দীন তাবরীযী (১২০৫খৃঃ), তাকীউদ্দীন আল-আরাবী (১২৫০খৃঃ-ধামুরাইরহাট,নওগাঁ), শরফুদ্দীন আবু তাওয়ামা (১৩০০ খৃঃ- সোনারগাঁও, নারায়ণগঞ্জ), শাহজালাল (১৩০৩-সিলেট) প্রমুখ মুবাল্লিগের নাম ইতিহাসে এসেছে যাদের দা‘ওয়াতী তৎপরতায় বর্ণবৈষম্যে অত্যাচারিত ও শাসক নিপীড়নে বিপর্যস্ত হিন্দু ও বৌদ্ধরা ব্যাপকহারে দলে দলে ইসলামের শান্তি ও ন্যাবোর্তা গ্রহণ করেছিল। শুধু তাই নয় এ সময় অনেক শাসক ইসলামের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে ইসলাম গ্রহণ করেন এবং ইসলাম প্রচারে ব্যাপক সহযোগিতা করেন।

আবার অনেকে ইসলামের বিরুদ্ধাচারণ করে মুবাল্লিগদের বিতাড়িত করার জন্য অস্ত্রধারণ করেন। অনেক মুবাল্লিগ এ সময় তাদের হাতে প্রাণ হারান, যাদের মধ্যে বাবা আদম শহীদের নাম উল্লেখযোগ্য। অনেক সময় মুবাল্লিগ ও নওমুসলিমরাও সশস্ত্র প্রতিরোধ গড়ে তুলে এসব রাজাদের বিরুদ্ধে জয়লাভ করেন। ১৩০৩ সালে বিখ্যাত শাহজালাল ইয়েমেনী (রহঃ) ৩৬০ জন সঙ্গীসহ রণপ্রস্ত্ততি নিয়েই দিল্লি থেকে সিলেটে আগমন করেছিলেন এবং অত্যাচারী রাজা গৌরগোবিন্দকে পরাজিত করেন। তাঁর উন্নত চরিত্র মাধুর্যে মুগ্ধ হয়ে বাংলার হাজার হাজার হিন্দু-বৌদ্ধ ইসলাম গ্রহণ করেছিল।