কুরআন পড়া’ বোঝাতে আমরা কোন শব্দটি সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করি?
– তিলাওয়াত
অথচ কুরআন নাযিলের সময় সর্বপ্রথম কিন্তু “উতলু” অর্থাৎ “তুমি তিলাওয়াত কর” একথা বলা হয়নি। বলা হয়েছিল “ইকরা” তুমি পড়।
আরবি শব্দ ‘উতলু’ মানে – তুমি তিলাওয়াত কর। এর মূল – তিলাওয়াত। আর ‘ইকরা’ মানে – তুমি পড়। এর মূল – কিরাআত।
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ’লার উদ্দেশ্য যদি হত “তিলাওয়াত কর” তিনি কি “উতলু” বললেই পারতেন না? কেন আল্লাহ তাআলা “উতলু” না বলে “ইকরা” বললেন? কি পার্থক্য ‘উতলু’ আর ‘ইকরা’র মাঝে?
আরবি ‘তিলাওয়াত’ শব্দের একদম লিটারেল অর্থ হল – অনুসরণ করা। কুরআনে পাবেন “ওয়াল ক্বামারি ইযা তালাহা” চাঁদের শপথ যখন তা সূর্যকে অনুসরণ করে।
তাহলে কুরআনের ক্ষেত্রে ‘তিলাওয়াত’-এর অর্থ কি হবে?
কুরআন তিলাওয়াতের অর্থ হল হুবহু সেই আবৃত্তিকে অনুসরণ করা যেভাবে কুরআন নাযিল হয়েছে। অর্থাৎ মাদ্দ, গুন্নাহ, কোথায় লম্বা টেনে পড়তে হবে, কোথায় থামতে হবে, কোথায় থামা যাবে না, এ সকল কিছু যথাযথভাবে আদায় করে পড়া।
বিশ্বাস করুন, আল্লাহ প্রথমেই আপনার থেকে এতকিছু চাননি। তিনি চেয়েছেন প্রথমে আপনি শুধু পড়েন। ইকরা।
‘কিরাআত’-এর আক্ষরিক অর্থ হলো – অধ্যয়ন। যাস্ট অধ্যয়ন। বুঝে বুঝে পড়া, চিন্তা করে পড়া। এর মধ্যে মাদ্দ গুন্নাহর সহীহ হওয়া না হওয়ার কোন শর্ত নেই। এমনকি আপনি যে কোন স্থানে থামতেও পারেন। শব্দ, বাক্য ভেঙে ভেঙে আলাদা আলাদা করে পড়তে পারেন; বোঝার জন্য।
আমরা কুরআন শেখার শুরুতেই এর আবৃত্তির দিকে চলে যাই। অথচ কায়দা-কানুন একটু কম হলেও, উচ্চারণ সহিহ-শুদ্ধ কিছু কম হলেও এর থেকে অনেক বেশী ইম্পর্ট্যান্ট হল আগে কথাগুলো বোঝা। হৃদয়ঙ্গম করা।
তারপর যার যার সাধ্য অনুযায়ী তিলাওয়াতকে সুন্দর করার চেষ্টা করা। অন্তত যেন ভূল না হয়। কেননা নামাজে পড়া নির্ভুল হওয়ার বিষয়টিও খেয়াল রাখতে হবে।
কেউ যখন বিষন্ন মন নিয়ে কুরআন খুলে বসে, পড়তে শুরু করে “আলা বি যিকরিল্লাহি তাতমা ইন্নুল কুলুব” তখন ওই নুনের ওয়াজিব গুন্নাহর হক আদায় করতে পারার চাইতে তার জন্য অনেক বেশী ইম্পর্ট্যান্ট হলো সে এই কথাটি বুঝবে “নিশ্চয় আল্লাহর স্মরণেই মন শান্তি পায়”।
এভাবে অল্প হলেও প্রতিদিন কুরআনের কিছু অংশ ‘পড়ুন’ যা আপনার মনের ঘায়ে মলমের মত কাজ করবে। তারপর এর আবৃত্তি যতটা পারা যায় সুন্দর করার চেষ্টা করুন।
তবে যেসব বাচ্চারা মাদ্রাসায় কুরআন শিখছে, বোঝার বয়স যাদের এখনও হয়নি, অথবা কেউ টার্গেট নিয়ে কোন উস্তাযের নিকট শিখছেন, তাদের কথা ভিন্ন।
আর আরবদের ক্ষেত্রে এ ধরনের কোন কথা বলাই বাহুল্য। তারা শব্দ শুনে বুঝে নিতে পারেন তার উচ্চারণ এবং বানান কি হবে।
আসলে, সমস্যাটি সেদিন থেকে শুরু হয়েছে, যেদিন থেকে এই বাংলার মুসলিমরা কোরআনের আবৃত্তি এবং বুঝা কে আলাদা করেছেন।
কোন কিছু পড়বো অথচ বুঝবো না পৃথিবীর কোথাও এরকম নজির নেই। পড়া এবং বোঝা কিভাবে আলাদা হয়? দুঃখজনকভাবে শুধু কোরআনের ক্ষেত্রেই আমরা এই কাজটি করে থাকি, যে গ্রন্থকে বোঝা পৃথিবীর সকল গ্রন্থ বুঝে পড়ার চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
আল্লাহ কুরআনকে আমাদের অন্তরের বসন্ত বানিয়ে দিন।
ওয়াল্লাহু আ’লাম।