কুরআনর ১০টি অধিকার

কোরআন ও হাদিসের আলোকে পবিত্র কোরআনে কারিমের ১০টি অধিকারের কথা তুলে উল্লেখ করা হলো-

১. কোরআনের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা : কোরআনের প্রতি পাঠকের বিশ্বাস পরিশুদ্ধ না হলে পাঠক কোনোক্রমেই কোরআন দ্বারা যথাযথ উপকার লাভ করতে পারবে না। এ প্রসঙ্গে কোরআনে ইরশাদ হচ্ছে,

“হে মুমিনগণ! তোমরা বিশ্বাস স্থাপন কর, আল্লাহর প্রতি, তার রাসূলের প্রতি এবং যে গ্রন্থ তার রাসূলের ওপর অবতীর্ণ হয়েছে তার প্রতি। এবং যা অবতীর্ণ হয়েছে পূর্ববর্তীদের প্রতি।” -সূরা নিসা : ১৩৭

২. শুদ্ধভাবে কোরআন পড়তে শেখা : কোরআন তেলাওয়াত শুদ্ধ করা মুমিনের জন্য ফরজ। কেননা বিশুদ্ধ কোরআন তেলওয়াত ব্যতীত নামাজ শুদ্ধ হয় না। মুমিন বান্দার প্রতি কোরআনের অধিকার হলো, কোরআনে কারিম বিশুদ্ধভাবে তেলওয়াত করা। কোরআনে আল্লাহ বলেন,

‘তুমি কোরআনকে তারতিলের সঙ্গে অর্থাৎ ধীরস্থীরভাবে তেলাওয়াত কর।’ -সূরা মুজ্জাম্মিল : ৪
(পরিভাষায় তারতিল বলা হয় কোরআন যথাযথ নিয়ম রক্ষা করে পাঠ করাকে)

৩. আমল করা : কোরআন হলো মানবজাতির জীবনসমস্যার সমাধানে আল্লাহপ্রদত্ত ব্যবস্থাপত্র। সুতরাং কোরআনের প্রকৃত কল্যাণ লাভ করতে হলে তার আদেশ, নিষেধ ও বিধি-বিধান মান্য করে চলতে হবে। উপাদেয় খাবারের ঘ্রাণ নেয়ার মতো যদি শুধু তার তেলাওয়াতকেই যথেষ্ট মনে করা হয়, তবে কোরআনের প্রকৃত স্বাদ ও কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হতে হবে। আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন,

‘তোমাদের প্রতি তোমাদের রবের পক্ষ থেকে যা নাজিল করা হয়েছে, তা অনুসরণ কর এবং তাকে ছাড়া অন্য অভিভাবকদের অনুসরণ কর না। তোমরা সামান্যই উপদেশ গ্রহণ কর।’ -সূরা আরাফ : ৩

৪. শেখা এবং শেখানো : মুমিনের প্রতি কোরআনের অধিকার হলো, সে নিজে কোরআন শিক্ষা করবে এবং অন্যকেও শিক্ষা দিবে। বিশেষত সন্তান-সন্তুতিকে কোরআন শেখানো, পরিবারে কোরআনের চর্চা করা মুমিনের দায়িত্ব। মূলত এর মাধ্যমেই পবিত্র কোরআনের সংরক্ষণ ও চর্চা কেয়ামত পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে। হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন,

‘তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম সে ব্যক্তি যে নিজে কোরআন শিখে এবং অন্যকে শেখায়।’ -সহিহ বোখারি : ৫০২৭

৫. অধিক পরিমাণ তেলাওয়াত করা : এক হাদিসে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) কোরআন তেলাওয়াতকে সর্বোত্তম ইবাদত আখ্যা দিয়েছেন। অন্য হাদিসে ইরশাদ হয়েছে,

‘তোমরা কোরআন তেলাওয়াত কর, কেননা কেয়ামতের দিন তা আপন বাহকের জন্য সুপারিশকারী হবে।’ -সহিহ মুসলিম : ১৯১০

অর্থ ও মর্ম বুঝে কোরআন তেলাওয়াত করা ঈমানের দাবী ও ইসলামের শিক্ষা।

৬. অনুধাবন ও উপলব্ধির চেষ্টা করা : পবিত্র কোরআন জ্ঞান-বিজ্ঞানের অন্তহীন উৎস। আল্লাহতায়ালা কোরআন অনুধাবনে গভীর মনোযোগ প্রদানের নির্দেশ দিয়েছেন। ইরশাদ হয়েছে,

‘তবে কি তারা কোরআন নিয়ে গভীর চিন্তা-ভাবনা করে না? নাকি তাদের অন্তরসমূহে তালা রয়েছে।’ -সূরা মুহাম্মদ : ২৪

৭. কোরআনের প্রচার ও প্রসার : কোরআনের শিক্ষা ও কোরআনি শিক্ষার প্রচার ও প্রসারে কাজ করা কোরআনের অন্যতম অধিকার। যারা কোরআনের প্রচারে কাজ করবে আল্লাহতায়ালা তাদেরকে দুনিয়া ও আখেরাতে সম্মানিত করবেন। ইরশাদ হয়েছে,

‘হে রাসূল! আপনি পৌঁছে দিন আপনার নিকট যা অবতীর্ণ হয়েছে।’ -সূরা মায়েদা : ৬৭

হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বিদায় হজের ভাষণে বলেছেন, ‘আমার পক্ষ থেকে একটি আয়াত হলেও পৌঁছে দাও।’ -সহিহ বোখারি : ৩৪৬১

৮. কোরআন হিফজ করা : আল্লাহতায়ালা নিজে কোরআন সংরক্ষণের দায়িত্বগ্রহণ করেছেন। কোরআন সংরক্ষণের একটি দিক হলো তা মানুষের অন্তরে অবিকৃত অবস্থায় সংরক্ষণ করা। যারা কোরআন হিফজ করলো, তারা মূলত কোরআন সংরক্ষণে আল্লাহর মহান মিশনে অংশগ্রহণ করলো। হাদিসে ইরশাদ হয়েছে,

‘কোরআনের হাফেজকে বলা হবে কোরআন পড়ে যাও, আর ওপরে উঠতে থাক। ধীর-স্থিরভাবে তারতিলের সঙ্গে পাঠ কর, যেমন দুনিয়াতে তারতিলের সঙ্গে পাঠ করতে। কেননা জান্নাতে তোমার অবস্থান সেখানেই হবে, যেখানে তোমার আয়াত পড়া শেষ হয়।’ -সুনানে তিরমিজি : ২৯১৪

৯. কোরআনের প্রতি সন্তুষ্টি প্রকাশ : কোরআন আল্লাহতায়ালার অমূল্য দান। এ দানে আল্লাহতায়ালা উম্মতে মুহাম্মাদিকে ধন্য করেছেন। সুতরাং মানুষের দায়িত্ব হলো, তা পাঠ, অনুধাবন ও অনুসরণের মাধ্যমে সন্তুষ্টি ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা। ইরশাদ হয়েছে,

‘বলুন! এটা আল্লাহর অনুগ্রহ ও দয়া। সুতরাং তারা যেনো এ ব্যাপারে সন্তুষ্ট হয়। এটা তাদের জন্য উত্তম যা তারা জমা করে তা থেকে।’ -সূরা ইউনুস : ৫৮

কোরআনের যতটুকু শিক্ষা আল্লাহতায়ালা আমাদের দান করেছেন সে ব্যাপারে অবশ্যই সন্তুষ্ট হতে হবে।

১০. কোরআনের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা : কোরআনকে যথাযথ সম্মান প্রদান করা মুমিনের দায়িত্ব ও কর্তব্য।

কোরআনের বিধি-বিধান ও বর্ণনাসমূহের প্রতি অবজ্ঞা প্রদর্শন এবং তা নিয়ে উপহাস করা ঈমানবিধ্বংসী কাজ। আল্লাহতায়ালা কোরআন নিয়ে উপহাস করতে নিষেধ করেছেন। ইরশাদ হয়েছে,

‘আল্লাহর আয়াতসমূহকে উপহাসের পাত্র হিসেবে গ্রহণ করো না।’ -সূরা বাকারা : ২৩১

আশরাফ আলী থানভী (রহ.) পবিত্র কোরআনের অধিকার আলোচনায় ৩টি অধিকারের কথা বলেছেন। সেগুলো হলো-

এক. বিশুদ্ধভাবে কোরআন তেলাওয়াত করা,
দুই. কোরআনের অর্থ ও মর্ম অনুধাবন করা ও
তিন. জীবনের সর্বস্তরে কোরআনের অনুসরণ করা।